চিকিৎসা একটি মৌলিক প্রয়োজন, আর ভালো চিকিৎসার খোঁজে মানুষ সীমানা পেরিয়ে যেতেও দ্বিধা করে না। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই মালয়েশিয়া সম্প্রতি কম্বোডিয়ায় তাদের স্বাস্থ্যসেবার উৎকর্ষ তুলে ধরেছে। মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিল (MHTC) দ্বারা আয়োজিত “মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার সপ্তাহ ২০২৫” ছিল মূলত দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সম্পর্ক জোরদার করার একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা, যার মূল লক্ষ্য ছিল মালয়েশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
কম্বোডিয়ার ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠী উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায়শই দেশের বাইরে পাড়ি জমান। এই চাহিদা পূরণে মালয়েশিয়া তাদের সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট (IJN), কেপিজে হেলথকেয়ার এবং সানওয়ে হেলথকেয়ার গ্রুপকে একত্রিত করে। ইভেন্টটিতে শুধু অত্যাধুনিক চিকিৎসার পদ্ধতিই নয়, বরং প্রতিরোধমূলক সেবা, সুস্থ জীবনযাপন এবং ঐতিহ্যবাহী ও পরিপূরক চিকিৎসার এক সুসংহত মিশ্রণও উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন মেডিকেল শেয়ারিং সেশন, ব্যবসায়িক আলোচনা ও সাধারণ মানুষের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এই সেবাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল।
মালয়েশিয়া ইতোমধ্যেই চিকিৎসা পর্যটনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গত বছর দেশটির স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ভ্রমণ করেছে, যা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব এনে দিয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে কম্বোডিয়ার অবদান দিন দিন বাড়ছে; দেশটি এখন মালয়েশিয়ার জন্য একটি উদীয়মান গুরুত্বপূর্ণ বাজার। মূলত নৈকট্য, সাশ্রয়ী মূল্য, বহুভাষিক সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে মালয়েশিয়া কম্বোডিয়ান রোগীদের জন্য একটি আদর্শ পছন্দ হয়ে উঠেছে।
এই সপ্তাহে বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী হাই-টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিদেশি কূটনীতিকদের স্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এর পাশাপাশি মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাসপাতালগুলো এবং রোগীদের নির্বিঘ্ন চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, বীমা সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথেও আলোচনা হয়। মালয়েশিয়া ২০২৬ সালকে “মালয়েশিয়া ইয়ার অফ মেডিকেল ট্যুরিজম” হিসেবে ঘোষণা করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে চিকিৎসা সেবার সাথে দেশের উষ্ণ আতিথেয়তা ও অনন্য সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাকেও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তুলে ধরা হবে।
পরিশেষে বলা যায়, কম্বোডিয়ায় মালয়েশিয়ার এই উদ্যোগ কেবল চিকিৎসা সেবার প্রসারই নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া বিশ্বব্যাপী একটি নির্ভরযোগ্য ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে চায়। রোগীদের জন্য একটি নির্বিঘ্ন, উন্নত ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ চিকিৎসা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়া আগামী দিনে চিকিৎসা পর্যটন শিল্পে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা তাদের ২০২৬ সালের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।