খাবার নষ্ট? না, আর নয়! বাংলাদেশ জেগে উঠেছে।

প্রতি বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা দিবস। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে খাবার আমাদের বেঁচে থাকার মূল ভিত্তি, তার একটি বিশাল অংশ প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। এমন এক সংকটময় মুহূর্তে যখন বিশ্বের অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত, তখন খাদ্য অপচয় এক গভীর চিন্তার বিষয়। আনন্দের খবর হলো, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশও এখন সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

খাদ্য অপচয় শুধু আমাদের থালার অতিরিক্ত ফেলে দেওয়া খাবার নয়। এটি শুরু হয় ক্ষেত থেকে, ফসল সংগ্রহ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি ধাপে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে একদিকে যেমন লাখ লাখ মানুষ অভুক্ত থাকে, তেমনি অন্যদিকে নষ্ট হয় প্রাকৃতিক সম্পদ, শক্তি এবং অর্থনৈতিক মূল্য। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও একটি বড় কারণ।

আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খাদ্য অপচয়ের চিত্রটা বেশ স্পষ্ট। বিয়েবাড়ি, দাওয়াত বা রেস্তোরাঁগুলোতে প্রায়শই দেখা যায় খাবারের বিশাল অপচয়। বাড়িতেও অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাজার করেন অথবা রান্না করেন, যার ফলে বাড়তি খাবার নষ্ট হয়। একদিকে যখন দেশের একটি বড় অংশ দু’বেলা ঠিকমতো খেতে পায় না, তখন অন্য একটি অংশের এই অগণিত খাদ্য অপচয় সত্যিই দুঃখজনক। এই বৈপরীত্য আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বের প্রতি প্রশ্ন তোলে।

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন সামগ্রিক প্রচেষ্টা। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত কৃষকদের ফসল সংরক্ষণে সহায়তা করা, আধুনিক হিমাগার স্থাপন করা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও কার্যকর করা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা সবাই সচেতন হতে পারি: প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা করা, পরিমাণ মতো রান্না করা, বেঁচে যাওয়া খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং পুনর্ব্যবহার করা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পারিবারিক আড্ডা পর্যন্ত সবখানে এই বিষয়ে আলোচনা হওয়া জরুরি।

খাদ্য অপচয় রোধ কেবল একটি অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি মানবিকতারও প্রশ্ন। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই ধারাকে থামাতে। প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যদি সামান্য সচেতন হয়, তাহলে বিশাল পরিবর্তন আনা সম্ভব। আসুন, আমরা শপথ নিই – আমাদের থালা থেকে কোনো খাবার অপচয় হবে না। খাবারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বশীলতা যেন একটি সুন্দর ভবিষ্যতের পথ খুলে দেয়।

উৎস: https://www.thedailystar.net/star-health/news/stop-wasting-food-bangladesh-acts-now-3996191

সর্বশেষ লেখা