জনগণের রায়, উপদেষ্টাদের দায়: ‘নিরাপদ প্রস্থান’ কতটা যৌক্তিক?

গণতন্ত্রে জনগণের ভূমিকা যে সর্বেসর্বা, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে এই ধারণাকে আরও একবার সামনে এনেছেন। জাতিসংঘ অধিবেশন শেষে নিজের এলাকায় ফেরার পথে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা উপদেষ্টাদের ‘নিরাপদ প্রস্থান’ নেওয়ার প্রবণতা দেশের জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তার এই উক্তি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

‘নিরাপদ প্রস্থান’ শব্দবন্ধটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এর মানে কি দায়িত্ব পালন শেষে কোনো রকম দায়ভার বা সমালোচনা এড়িয়ে চলে যাওয়া? সাধারণত, ব্যাপক জনসমর্থন ও আন্দোলনের মুখে যাঁরা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাঁদের ওপর জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী। তাই শুধু মেয়াদ পূর্ণ করে চুপচাপ সরে যাওয়াকে জনগণ তাদের প্রতি অঙ্গীকারের অভাব হিসেবেই দেখতে পারে। এমন একটি সময়ে যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের ‘নিরাপদ প্রস্থান’ ধারণাই প্রশ্নের জন্ম দেয়।

জনগণ কেন এই প্রবণতা মেনে নেবে না? কারণ, একটি গণআন্দোলনের পেছনে থাকে হাজারো মানুষের ত্যাগ, আশা ও আকাঙ্ক্ষা। সেই আন্দোলনের ফলস্বরূপ যারা ক্ষমতায় আসেন, তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে এই বিশাল জনসমষ্টির ভবিষ্যৎ। উপদেষ্টাদের কাজ শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সচল রাখা নয়, বরং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করা এবং পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। যদি এই মৌলিক দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি থাকে, তবে সেই দায়ভার এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত এই ‘নিরাপদ প্রস্থান’-এর ধারণা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করতে পারে। যদি দায়িত্বশীল পদাধিকারীরা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে শুরু করেন, তবে তা ভবিষ্যতে জনমত গঠন ও গণআন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে। সুশাসন ও স্বচ্ছতার জন্য জরুরি হলো, প্রতিটি পদাধিকারী তার কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এই দায়বদ্ধতা কেবল আইনগত নয়, এটি একটি নৈতিক অঙ্গীকারও বটে।

পরিশেষে বলা যায়, আখতার হোসেনের মন্তব্যটি শুধু একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, এটি জনগণের গভীর প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি। উপদেষ্টাদের উচিত হবে জনগণের প্রতি তাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা। ‘নিরাপদ প্রস্থান’ তখনই অর্থবহ হবে যখন তা জনস্বার্থ নিশ্চিত করে এবং সব দায়বদ্ধতা সুচারুভাবে সম্পন্ন করে সম্পন্ন হয়, কেবল তখন জনগণ তাকে সাদরে গ্রহণ করবে। অন্যথায়, এই প্রবণতা জনগণের স্মৃতিতে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েই রয়ে যাবে।

উৎস: https://www.ittefaq.com.bd/756235/%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AB-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%9F-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A3%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%97%E0%A6%A3-%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87

সর্বশেষ লেখা