বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর নিয়ে এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর, সম্প্রতি আধুনিকায়নসহ পুনরায় চালু হয়েছে এর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট) ইউনিট। শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে হাসপাতালের নতুন ভবনের দশম তলায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এটি কেবল একটি চিকিৎসা সেবার পুনরারম্ভ নয়, বরং অসংখ্য রোগীর জন্য নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলার একটি মাইলফলক।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন একটি অত্যন্ত জটিল এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা পদ্ধতি, যা সাধারণত রক্ত ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া এবং অন্যান্য গুরুতর রক্ত সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অপরিহার্য। যখন এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি বন্ধ ছিল, তখন অনেক রোগীকে নিরুপায় হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে হতো, যা ছিল ব্যয়বহুল এবং অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটায় এখন দেশের ভেতরেই স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো, যা রোগীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারেও স্বস্তি এনে দেবে।
পুনরারম্ভের পাশাপাশি, ঢামেকের এই ইউনিটটিকে আধুনিকায়নও করা হয়েছে, যা এর কার্যকারিতা এবং সাফল্যের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করবে যে রোগীরা বিশ্বমানের সেবা পাচ্ছেন। এটি কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজেরই সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে না, বরং দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার মানকেও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষায়িত এই সেবা এখন আরও বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।
এই উদ্যোগটি প্রমাণ করে যে, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। করোনা মহামারির মতো অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি জটিল চিকিৎসাসেবা পুনরায় চালু করা এবং তাকে আরও উন্নত করা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অর্জন। এটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিবেদন এবং সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি রোগীদের জন্য স্বস্তি এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ইউনিটের এই পুনরারম্ভ হাজার হাজার রোগীর জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে। এটি কেবল একটি চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করছে না, বরং জীবনকে নতুন করে উপভোগ করার একটি সম্ভাবনা তৈরি করছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার এই অগ্রগতি আগামী দিনে আরও অনেক জটিল রোগের চিকিৎসার পথ সুগম করবে এবং দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবায় স্বাবলম্বী করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।