টিকটকে হোয়াইট হাউসের পদধ্বনি: সুরক্ষার উদ্বেগ নাকি ভোটারদের মন জয়?

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন রাজনীতিতে এক কৌতূহলোদ্দীপক পরিবর্তন এসেছে – হোয়াইট হাউস এখন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকে তাদের দাপ্তরিক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। যে প্ল্যাটফর্মকে একসময় জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছিল এবং সাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, আজ সেই প্ল্যাটফর্মেই তাদের পদার্পণ যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত সংযোজন নয়, বরং যোগাযোগ কৌশল এবং ডিজিটাল কূটনীতির এক বড় বাঁকবদল।

হোয়াইট হাউসের টিকটক অ্যাকাউন্টের প্রথম পোস্টটি তাৎক্ষণিকভাবেই নজর কেড়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন মুহূর্তের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জনপ্রিয় কেন্ড্রিক লামারের সঙ্গীতের সাথে, যা ‘ক্রিড’ সিনেমার ভাইরাল ভিডিও এডিটের অনুকরণ। “আমি আপনার কণ্ঠস্বর” – এই বার্তাটি ট্রাম্পের নিজস্ব কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, যা তরুণ ভোটারদের কাছে সরাসরি পৌঁছানোর এক সুচিন্তিত প্রচেষ্টা। প্রশাসন মনে করছে, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই তারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে তরুণদের সমর্থন লাভে সফল হয়েছিলেন, যেখানে তাদের প্রচারণার অ্যাকাউন্টটি ১৫ মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী অর্জন করেছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট যেমনটা জানিয়েছেন, এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করে তারা এমনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে চান যা আগে কোনো প্রশাসন করেনি।

এই পদক্ষেপের পেছনে একটি বড় স্ববিরোধিতা লক্ষণীয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একসময় এই টিকটক অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তিনি চীনের সাথে অ্যাপটির মূল সংস্থা বাইটড্যান্সের যেকোনো লেনদেন নিষিদ্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশও স্বাক্ষর করেন। তৎকালীন যুক্তি ছিল, টিকটকের ডেটা সংগ্রহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে আমেরিকান নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে প্রবেশাধিকার দেবে, যা সরকারি কর্মচারী ও ঠিকাদারদের অবস্থান ট্র্যাক করতে, ব্যক্তিগত তথ্যের ফাইল তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল করতে এবং কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তি চালাতে ব্যবহৃত হতে পারে।

তবে, ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প দ্রুতই টিকটক নিষিদ্ধ করার আইনটি স্থগিত করে দেন এবং বাইটড্যান্সকে তাদের মার্কিন ব্যবসা বিক্রির জন্য আরও সময় দিতে বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞার তারিখ পেছান। এর পেছনে একটি কারণ হয়তো তাঁর রাজনৈতিক লাভালাভের হিসাব, যেখানে তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একবার দাবি করেছিলেন যে একটি “অত্যন্ত ধনী” গোষ্ঠী টিকটক কেনার জন্য প্রস্তুত, তবে এখন পর্যন্ত সেই গোষ্ঠীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এই পটপরিবর্তন স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় যে, ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ এবং কৌশলগত প্রচারণার মধ্যে কত সূক্ষ্ম একটি ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

শেষ পর্যন্ত, হোয়াইট হাউসের এই টিকটক যাত্রা কেবল একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হওয়া নয়; এটি আধুনিক রাজনৈতিক যোগাযোগের একটি গভীর পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। এটি প্রমাণ করে যে, কৌশলগত প্রয়োজনে এবং ভোটারদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে অতীতের কঠোর নীতি থেকেও সরে আসা সম্ভব। জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অপরিহার্য শক্তিকে কোনো প্রশাসনই আর উপেক্ষা করতে পারছে না। সামনের দিনগুলোতে এই নতুন যোগাযোগ মাধ্যম কিভাবে হোয়াইট হাউসের বার্তা পৌঁছে দেবে এবং জনমত গঠনে কতটা কার্যকর হবে, তা দেখার জন্য বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে।

উৎস: https://www.engadget.com/social-media/the-white-house-now-has-a-tiktok-account-032420845.html

সর্বশেষ লেখা