ডাকসু নির্বাচন: মসৃণ ভোটের পেছনের গল্প

ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ডাকসু নির্বাচন মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়, বরং তারুণ্যের স্বপ্ন আর আগামীর নেতৃত্ব গড়ার এক সম্মিলিত প্রয়াস। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সবসময়ই থাকে এক অন্যরকম উন্মাদনা। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এই মঞ্চের প্রতি তাই সবারই থাকে বিশেষ আগ্রহ, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবারের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ছিল সুশৃঙ্খল, আর পুরো প্রক্রিয়াটি চলেছে অত্যন্ত মসৃণভাবে। লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে ব্যালট পেপার হাতে পাওয়া এবং নির্ভুলভাবে সিল মেরে বাক্সে ফেলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই ছিল দ্রুত ও ঝুটঝামেলাহীন। মনে হচ্ছিল, যেন এক নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের এই ক্ষুদ্র পাঠটি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

তবে শুধু ভোটগ্রহণের মসৃণতা দিয়েই একটি নির্বাচনের সার্বিক সাফল্য মাপা যায় না। ভোটের দিনের শান্ত পরিবেশের নিচে চাপা পড়ে থাকে নানা গুঞ্জন, রাজনৈতিক চাপ এবং অদেখা অনেক সমীকরণ। একদিকে যেমন ছিল শান্তিপূর্ণ ভোটদানের স্বস্তি, তেমনি অন্যদিকে ভোটের বাইরে ছাত্রনেতাদের কর্মকাণ্ড, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে সংশয় শিক্ষার্থীদের মনে উঁকি দিচ্ছিল। এমন একটি নির্বাচন ঘিরে যেমন থাকে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা, তেমনি এর বাস্তব চিত্র মাঝে মাঝে হতাশাও নিয়ে আসে।

এত সব আলোচনার পরও, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য। এটি শিক্ষার্থীদের নিজেদের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার এবং তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে। ভোটদানের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি সত্যিকার অর্থেই সবার আস্থা অর্জন করতে পারে, তবেই এই মঞ্চ থেকে প্রকৃত নেতৃত্ব উঠে আসবে, যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, দেশের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে।

পরিশেষে বলা যায়, ডাকসু নির্বাচনের এবারের অভিজ্ঞতা ছিল মিশ্র। ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়াটি যেমন ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ ও ঝামেলামুক্ত, তেমনি এর পেছনের রাজনীতি এবং সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। আশা করি, ভবিষ্যতে এমন নির্বাচনগুলো আরও বেশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সকল শিক্ষার্থীর আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশই পারে ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে।

উৎস: https://www.thedailystar.net/opinion/views/news/my-ducsu-voting-experience-the-good-and-the-bad-3984926

সর্বশেষ লেখা