দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি তাদের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে একটি যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশটির প্রতিরক্ষা কৌশলে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রেসিডেন্ট লি জায়ে মায়ুং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, দ্রুত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে স্বাধীন জাতীয় প্রতিরক্ষা অপরিহার্য। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো, যুদ্ধকালীন অপারেশনাল কন্ট্রোল বা অপকন (OPCON) পুনরুদ্ধার করা এবং যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া জোটের শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নেতৃত্ব দেওয়া। এটি সিউলের সামরিক সার্বভৌমত্বের দিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে এই অপারেশনাল কন্ট্রোল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিল। এই দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের হাতে প্রতিরক্ষা পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। এটি কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়, বরং জাতীয় মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক। সিউল মনে করছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করার সময় এসেছে, যেখানে দ্রুত ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, এই পদক্ষেপকে অনেকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ জুয়া’ হিসেবে দেখছেন। অপকন পুনরুদ্ধার মানে কেবল ক্ষমতা অর্জন নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত বিশাল দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ। উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত পারমাণবিক হুমকি এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। মিত্র রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে এবং তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখে কীভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করা হবে, তা একটি বড় প্রশ্ন। সামরিক সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, এবং কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়া সহজ কাজ নয়।
এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে যেমন এটি দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়াবে, অন্যদিকে তেমনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। উত্তর কোরিয়া, চীন, এবং জাপানের মতো দেশগুলো এই পদক্ষেপকে কীভাবে দেখবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। সিউলের এই নতুন কৌশল আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা বা সহযোগিতার পথও তৈরি হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধকালীন অপারেশনাল কন্ট্রোল পুনরুদ্ধারের ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এটি দেশটির সামরিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রতিফলন। তবে, এই স্বাধীনতার পথে রয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি, যা সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সামরিক সক্ষমতার নিরন্তর উন্নতি। সিউলের এই পদক্ষেপ দেশটির ভবিষ্যতের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
উৎস: https://asiatimes.com/2025/10/seouls-dangerous-gamble-with-wartime-command/