সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ‘লাইভ টিভি’ এবং ‘নেক্সট টিভি’ নামে দুটি নতুন টেলিভিশন চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যম অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা এই উদ্যোগের পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম’ তৈরি এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করার কথা। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে দেশের গণমাধ্যমকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার এক সুদূরপ্রসারী প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে, যেখানে তথ্যপ্রবাহ আরও উন্মুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম’ বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কৌতূহল রয়েছে। এটি কেবল সরকারের সমালোচনার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং বিভিন্ন মতাদর্শের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করাকে ইঙ্গিত করে। একই সাথে, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে যারা দেশের পরিবর্তন চেয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন, তাদের কণ্ঠস্বরকে মূলধারার গণমাধ্যমে তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হলে তা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সমাজের বহুস্তরীয় চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
নতুন দুটি চ্যানেলের আগমন দেশের টেলিভিশন শিল্পে নতুন গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কেবল লাইসেন্স প্রদানই যথেষ্ট নয়। এই চ্যানেলগুলো কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে এবং ভিন্নমতকে সম্মান জানাতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তাদের মূল চ্যালেঞ্জ হবে শুধু সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং দর্শক-শ্রোতার আস্থা অর্জন করা এবং প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমী ও জনবান্ধব অনুষ্ঠান উপহার দেওয়া, যা গুণগত মানের নতুন উদাহরণ তৈরি করবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা যেকোনো সুস্থ সমাজের জন্য অপরিহার্য। এই নতুন চ্যানেলগুলোর উচিত হবে কেবল সরকারের দেওয়া নীতিমালার প্রতি অনুগত থাকা নয়, বরং সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা। প্রতিযোগিতা বাড়ার সাথে সাথে তথ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা, গুজবের পরিবর্তে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা এবং জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া তাদের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে তাদের বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্ভীক সাংবাদিকতা উপহার দিতে হবে, যা দেশের সার্বিক অগ্রগতির পথ সুগম করবে।
আশা করা যায়, লাইভ টিভি ও নেক্সট টিভির লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে সত্যিই একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণমাধ্যম পরিবেশ তৈরির দিকে দেশ এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এই উদ্যোগ যেন কেবল একটি শুরু হয়, এবং নতুন চ্যানেলগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে একটি স্বাধীন, সাহসী ও জনমুখী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটাই সকলের কাম্য। তবে এর প্রকৃত সুফল নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা ও স্বায়ত্তশাসনের ওপর, যা আগামী দিনে দেশের গণমাধ্যমের গতিপথ নির্ধারণ করবে।