দুর্নীতির বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর: নেপালের রাজপথে রক্তক্ষরণ

নেপালের হিমালয় ঘেরা শান্ত পরিবেশের আড়ালে সম্প্রতি এক চরম বেদনাদায়ক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন তারুণ্যের প্রতীক – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নদ্রষ্টা। এই ঘটনা শুধু নেপালের জন্য নয়, পৃথিবীর প্রতিটি কোণে যারা ন্যায় ও সুশাসনের স্বপ্ন দেখেন, তাদের সকলের জন্য এক গভীর দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। রাজপথে নেমে আসা সেইসব প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো অকালে স্তব্ধ হয়ে গেল, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে সমাজের বিবেককে।

দুর্নীতি নামক এই ব্যাধি মানব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে সকল উন্নতি ও সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। যখন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সততা ও স্বচ্ছতার অভাব দেখা যায়, সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান – প্রতিটি মৌলিক অধিকার যখন অসাধু চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে, তখন তরুণ প্রজন্মই সবার আগে এর শিকার হয়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনরোষের স্ফুলিঙ্গ প্রায়শই তরুণদের মধ্য থেকেই জ্বলে ওঠে, কারণ তারাই একটি উন্নত ও শোষণমুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।

এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী তরুণরা শুধু একটি শ্লোগান নিয়ে রাজপথে নামেনি, তারা বুকভরা সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাদের একটাই চাওয়া ছিল – একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, যেখানে মেধা ও শ্রমের মূল্যায়ন হবে, যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে, তাদের এই শান্তিপূর্ণ বা ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদকে দমন করতে যে নির্মম পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে, তা হৃদয়বিদারক। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই দৃঢ় সংকল্প আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি এক কঠিন বার্তা বহন করে।

নেপালের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়; এটি বিশ্বজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের এক বৃহত্তর চিত্রের প্রতিচ্ছবি। যেখানেই অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেখা যায়, সেখানেই সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এই আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একটি সুস্থ ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য জনগণের কণ্ঠস্বর কতটা জরুরি। সরকার যখন জনগণের মৌলিক চাওয়াকে দমন করে, তখন তা কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট থাকে না, বরং তা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের আদর্শের জন্য এক অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়।

রাজপথে ঝরে যাওয়া প্রতিটি রক্তবিন্দু হয়তো অগণিত তরুণ-তরুণীর বুকের গভীরে প্রতিবাদী চেতনাকে আরও দৃঢ় করবে। যদিও এই মুহূর্তে বেদনা আর ক্ষোভের ঢেউ গোটা বিশ্বকে আচ্ছন্ন করে আছে, তবুও এই আত্মত্যাগ হয়তো এক নতুন ভোরের সূচনা করবে, যেখানে দুর্নীতির কালো ছায়া থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পথ উন্মোচিত হবে। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরতরে স্তব্ধ হতে পারে না; বরং তা আরও সহস্র কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়, যতক্ষণ না ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়। আমাদের আশা, এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।

উৎস: https://www.bbc.com/news/articles/cm2zkmxlkm9o

সর্বশেষ লেখা