সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক শক্তিশালী প্রবাহ নিয়ে এসেছে, যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এই অর্থপ্রবাহ কেবল আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকেই মজবুত করছে না, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। এমন ইতিবাচক ধারা দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে এক সুসংবাদ, যা কঠিন সময়েও আশার আলো দেখাচ্ছে।
এই রেমিটেন্সের ঢেউ শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দিয়ে পরিবারগুলো জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে, ছোটখাটো ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়ছে, যা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক অন্যতম চালিকাশক্তি।
রেমিটেন্স বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো অর্থের উপর প্রণোদনা প্রদান, অবৈধ হুন্ডি পথ বন্ধ করে ব্যাংক চ্যানেলে অর্থ পাঠানো উৎসাহিত করা এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা এর অন্যতম। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও এই প্রবাহকে সচল রেখেছে।
তবে, এই ধারাকে টেকসই করতে হলে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রেমিটেন্সকে কেবল ভোগে ব্যয় না করে কীভাবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা, তাদের পাঠানো অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং অনানুষ্ঠানিক পথগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে রেমিটেন্স দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স একটি অবিচল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করছে। আমাদের প্রবাসীরা তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে দেশের উন্নয়নে যে অবদান রাখছেন, তা চিরস্মরণীয়। এই প্রবাহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে এবং এর সুদূরপ্রসারী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।