আজকাল চারপাশে একটি নীরব স্বাস্থ্যঝুঁকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যা একসময় বয়স্কদের রোগ বলে বিবেচিত হতো – সেটি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুঃখজনকভাবে, এই রোগ এখন তরুণ প্রজন্মের জীবনকেও গ্রাস করছে। আমাদের সমাজের দ্রুত পরিবর্তনশীল চালচলন এবং খাদ্যাভ্যাসই এর পেছনে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে, যা একটি সুস্থ জীবনধারার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এই প্রবণতা কেবল উদ্বেগজনকই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তাও বটে।
আমাদের জীবনযাত্রায় এসেছে এক বিশাল পরিবর্তন। যেখানে একসময় খেলাধুলা, হাঁটাচলা কিংবা দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রম ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানে এখন প্রযুক্তিনির্ভর স্থিরতা রাজত্ব করছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য গ্যাজেটের পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকার প্রবণতা আমাদের শারীরিক কার্যকলাপকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। এই দীর্ঘস্থায়ী বসে থাকার সংস্কৃতি আমাদের শরীরকে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করছে, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
একই সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। বাড়ির স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে আমরা ঝুঁকছি প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং ফাস্ট ফুডের দিকে। এই ধরনের খাবার একদিকে যেমন ক্যালরি সমৃদ্ধ, তেমনি পুষ্টিগুণে অত্যন্ত দরিদ্র। নিয়মিত এই ধরনের খাবার গ্রহণ আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে তোলে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রতি উদাসীনতা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বড় বিপদ ডেকে আনছে।
তরুণ বয়সে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আগমন দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করে, যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা এবং দৃষ্টিশক্তির অবনতি। শুধু তাই নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই ব্যক্তির জীবনমানকে প্রভাবিত করে। তাই এই নীরব ঘাতকের বিস্তার রোধে এখনই সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের বুঝতে হবে যে, সুস্থ শরীর একটি সম্পদ, যা আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপরিহার্য।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা – ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং পারিবারিক সমর্থন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং প্রযুক্তির পরিমিত ব্যবহার এই রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের সীমিত ব্যবহার এবং খেলাধুলা বা আউটডোর কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সুস্থ তারুণ্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। আসুন, আমরা সকলে মিলে একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ি, যেখানে তারুণ্য ডায়াবেটিসের ছায়ামুক্ত হয়ে প্রাণবন্তভাবে বেড়ে উঠবে।