বৈশ্বিক ঢেউয়েও বাংলাদেশের অর্থনীতির আলোর দিশা: রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি যখন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে, তখনও বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। কঠিন এই সময়েও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, আমাদের দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক স্থিতিশীল পথের দিশা দেখাচ্ছে।

এই স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি তাঁদের কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে কেবল নিজেদের পরিবারেরই সহায়তা করছেন না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও যোগান দিচ্ছেন এক শক্তিশালী ভিত্তি। এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা অর্থনৈতিক চাকার গতি সচল রাখতে সহায়ক।

রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি খাতকেও নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা চলছে। একসময় পোশাক শিল্পের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে এখন নতুন নতুন পণ্য ও বাজারের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। সরকার এবং বেসরকারি খাত যৌথভাবে তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদিত পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরার জন্য কাজ করছে। এই বহুমুখীকরণ ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

এই দুটি স্তম্ভ – রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবাহ এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ – বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুধু বর্তমান সংকট থেকে বাঁচাচ্ছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রবৃদ্ধির পথও সুগম করছে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ করলে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি দেশ তার অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং দেশের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে।

সুতরাং, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে পারছে, তা আমাদের সক্ষমতা এবং দূরদর্শী চিন্তারই প্রতিফলন। রেমিট্যান্সের অফুরন্ত ধারা এবং রপ্তানি খাতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন – এই দুটি শক্তিই বাংলাদেশকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ ও স্বাবলম্বী বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের পথে এক নতুন আশার আলো।

উৎস: https://www.bdnewsdaily.com/economy/bangladesh-resilience-exports-2024

সর্বশেষ লেখা