ঢাকা শহরের কোরাইল বস্তির মতো ব্যস্ত জনপদে সূর্যোদয়ের আগেই অনেক মায়ের দিন শুরু হয় কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে। তাদের প্রতিদিনের পথচলায় একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন নীরব সঙ্গী হয়ে থাকে – তাদের সন্তানেরা সারাদিন কোথায় থাকবে, কে তাদের দেখাশোনা করবে? এই ভাবনা যেন প্রতিটি পদক্ষেপে এক অদৃশ্য বোঝা হয়ে থাকে, যা তাদের কাজের মনোনিবেশে প্রায়শই বাধা দেয়।
এই কর্মজীবী মায়েরা কেবল পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনের সংগ্রামই করেন না, বরং একই সাথে তাদের সন্তানদের নিরাপদ ও সুষ্ঠু ভবিষ্যতের চিন্তায় জর্জরিত থাকেন। শহরের বুকে নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মূল্যে শিশু যত্নের জায়গার অভাব তাদের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রায়শই তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় – হয় শিশুকে অনিরাপদ পরিবেশে ফেলে যাওয়া, নয়তো কাজে না গিয়ে বাড়িতে থাকা, যা তাদের পরিবারের আয়ের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে এই প্রতিকূলতার মাঝেও কিছু মানবিক উদ্যোগ আশার আলো দেখাচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র এই মায়েরা যেখানে কাজ করেন, সেখানেই তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করছে। এই কেন্দ্রগুলো শুধু শিশুদের শারীরিক সুরক্ষাই নিশ্চিত করে না, বরং তাদের জন্য খেলাধুলা ও প্রাথমিক শিক্ষার একটি অনুকূল পরিবেশও তৈরি করে, যা মায়েদের মনে স্বস্তি এনে দেয় এবং তাদের কাজে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
এই ধরনের উদ্যোগগুলো কেবল একটি সহায়তা নয়, এটি নারী ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যখন একজন মা জানতে পারেন যে তার সন্তান নিরাপদ ও সঠিক পরিচর্যার মধ্যে আছে, তখন তিনি নিশ্চিন্তে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এটি তাদের আর্থিক স্বাধীনতা এনে দেয় এবং একই সাথে শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও সুরক্ষিত শৈশব নিশ্চিত করে। এই কেন্দ্রগুলো সমাজের প্রান্তিক শিশুদের ভবিষ্যৎ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পরিশেষে বলা যায়, এসব উদ্যোগ ঢাকা শহরের হাজার হাজার নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মায়ের জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল ব্যক্তিগত স্বস্তিই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে একটি শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী সমাজ গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ এবং প্রতিটি মায়ের জন্য কর্মক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ নিশ্চিত করতে এই ধরনের সহায়তার আরও প্রসার প্রয়োজন।
উৎস: https://www.thedailystar.net/my-dhaka/news/lifeline-low-income-working-mothers-3964086