রোহিঙ্গা সংকটের খোঁজে কক্সবাজারে সংলাপ: নিউইয়র্কের পথে নতুন দিগন্ত

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু অন্যতম। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশ এক দশকের বেশি সময় ধরে এক বিশাল বোঝা বহন করছে। এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে আগামী ২৫শে আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ’। এই সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যা সমস্যাটির প্রতি সরকারের গভীর মনোযোগেরই ইঙ্গিত বহন করে।

এই ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ’ নিছকই একটি আলোচনা সভা নয়, বরং এর লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর সুপারিশমালা তৈরি করা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও ভুক্তভোগী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সরাসরি মতামত ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা হবে। এমন বহুমুখী আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত এবং টেকসই সমাধানের জন্য একটি সম্মিলিত পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে, যা এই মানবিক বিপর্যয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

কক্সবাজারের এই সংলাপের গুরুত্ব কেবল আঞ্চলিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের একটি সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য এই সংলাপ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো ‘টেকওয়ে’ হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় পর্যায়ে উঠে আসা সমস্যা ও সম্ভাবনার গভীর উপলব্ধি আন্তর্জাতিক ফোরামে একটি শক্তিশালী এবং যুক্তিযুক্ত অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করবে, যা বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ে জরুরি।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক কাঠামোর উপর যে বিশাল চাপ পড়েছে, তা অনস্বীকার্য। এই পরিস্থিতিতে কেবল ত্রাণ বিতরণ বা সাময়িক সহায়তা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান, যা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করবে। এই সংলাপ একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে যেখানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সার্বিক কৌশল প্রণয়নের সুযোগ থাকবে।

কক্সবাজারের এই সংলাপ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। যদিও একটি একক আলোচনা সভার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তবুও এটি বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের ভিত্তি তৈরি করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আশা করা যায়, এই আলোচনা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সমগ্র অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

উৎস: https://en.ittefaq.com.bd/13137/ca-to-visit-cox%E2%80%99s-bazar-aug-25-to-attend-dialogue

সর্বশেষ লেখা