খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলো আবারও পাহাড়ি জনপদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর আঘাত হেনেছে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে যে নির্মল জীবনযাত্রার ছবি আমরা দেখতে চাই, তা বারবারই এমন অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষ আর অস্থিতিশীলতার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা শুধু জনজীবনে আতঙ্কই সৃষ্টি করে না, বরং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা সম্প্রীতির সুতোকেও দুর্বল করে দেয়। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য এসব ঘটনার মূল কারণ অনুসন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি।
এই ধরনের সহিংসতা পার্বত্য অঞ্চলে এক ভীতিকর চক্র তৈরি করে চলেছে। যখনই মনে হয় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, তখনই নতুন কোনো ঘটনা পুরনো ক্ষোভগুলোকে আবার উসকে দেয়। এর ফলে শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মগুলোও অবিশ্বাস আর আশঙ্কায় বড় হতে বাধ্য হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো মৌলিক বিষয়গুলোও এই অস্থিরতার কারণে ব্যাহত হয়, যা সামগ্রিক অগ্রগতির পথে বড় বাধা।
এমন পরিস্থিতিতে একটি নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতহীন তদন্তের ভূমিকা অপরিসীম। ঘটনার পেছনের সত্য উন্মোচন করা এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে সহিংসতা বন্ধ করা অসম্ভব। যদি ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন, তবে তারা রাষ্ট্র এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাবেন। তাই, সব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সমাধান করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কেবল কিছু ব্যক্তির শাস্তি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার মূল চাবিকাঠি। বারবার ঘটে চলা এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, কেবল সাময়িক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন একটি সুদূরপ্রসারী এবং সমন্বিত কৌশল, যা শান্তি ও সম্প্রীতিকে স্থায়ী রূপ দিতে পারে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো সমাধানই টেকসই হবে না।
খাগড়াছড়ি এবং এর মতো পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতার এই চক্র ভাঙতে একটি দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ। আমরা আশা করি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে, জড়িতরা শাস্তি পাবে এবং ভবিষ্যতের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি হবে যেখানে পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সবাই নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।