ভারতে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায়শই উত্তপ্ত বিতর্ক দেখা যায়। সম্প্রতি, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন সাংসদ, নিশীকান্ত দুবে, কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, অভিযোগ করেছেন যে ১৯৭৬ সালের ৪২তম সাংবিধানিক সংশোধনীটি ‘বাবাসাহেব’ ভীমরাও আম্বেদকর রচিত মূল সংবিধানকে ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ করেছে। এই ধরনের মন্তব্য কেবল একটি সাধারণ রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং এটি একটি দেশের মৌলিক নথির পবিত্রতা এবং তার পরিবর্তন নিয়ে গভীর আলোচনার জন্ম দেয়।
১৯৭৬ সালের ৪২তম সংশোধনীটি, যা প্রায়শই ‘ক্ষুদ্র সংবিধান’ নামে পরিচিত, ভারতের ইতিহাসে জরুরি অবস্থার সময়কালে পাশ হয়েছিল। এর মাধ্যমে সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রস্তাবনার পরিবর্তন, মৌলিক অধিকার এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা সংক্রান্ত অনেক ধারা উল্লেখযোগ্য। সমালোচকদের মতে, এই সংশোধনীটি ক্ষমতার ভারসাম্যকে নস্যাৎ করে কার্যনির্বাহী শাখার হাতে অধিক ক্ষমতা অর্পণ করেছিল, যা সংবিধান প্রণেতাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে আসার শামিল।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই অতীতের সিদ্ধান্ত এবং আইন নিয়ে একে অপরের সমালোচনা করে থাকে, বিশেষ করে যখন সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত থাকে। বিজেপির এই অভিযোগ কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের শাসনকালে সংবিধানের উপর তাদের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এমন বিতর্ক জনসাধারণকে দেশের আইন ও শাসনতন্ত্রের গভীরে যেতে এবং সময়ের সাথে সাথে এর বিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে, যদিও এর মূল উদ্দেশ্য প্রায়শই রাজনৈতিক লাভালাভ।
সংবিধান একটি জীবন্ত দলিল, যা সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো কতটা দূর পর্যন্ত যাওয়া উচিত এবং কখন তা মূল কাঠামোকে আঘাত করে, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। ৪২তম সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এটি সাংবিধানিক সংশোধনের সীমা এবং একটি নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা ব্যবহারের নৈতিকতা নিয়ে চলমান বিতর্কেরই অংশ। সংবিধানের ‘মূল কাঠামো’ বা ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ অক্ষুণ্ণ রাখা উচিত কিনা, সেই ধারণাও এই বিতর্কের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
পরিশেষে বলা যায়, দেশের সর্বোচ্চ আইনকে ঘিরে এমন বিতর্ক গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। এটি নাগরিক সমাজকে সংবিধানের প্রতি আরও যত্নশীল হতে এবং এর প্রতিটি ধারা ও সংশোধনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করে। একটি সংবিধানকে কেবল একটি আইনি নথি হিসেবে না দেখে, একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখার জন্য এই ধরনের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।