নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা এখন এক অধরা স্বপ্ন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে তাদের একমাত্র ভরসা, স্থানীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি। যে কেন্দ্রটি থাকার কথা ছিল দিনরাত মানুষের পাশে, হঠাৎ অসুস্থতায় প্রাথমিক আশ্রয় হিসেবে, সেটিই আজ তালাবদ্ধ। এর ফলে ইউনিয়নের অগণিত মানুষ সামান্য অসুস্থতাতেও পড়েছেন চরম বিপাকে, কারণ তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরের আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। এই দীর্ঘ পথযাত্রা কেবল সময়ের অপচয় নয়, এটি রোগীকে আরও ক্লান্ত করে তোলে এবং অর্থনৈতিকভাবেও চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই ভোগান্তি রীতিমতো অমানবিক। জরুরি প্রয়োজনে সময়মতো পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে, যা জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
সরকারের লক্ষ্য যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সেখানে একটি সচল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমন নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্ন তৈরি করে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো প্রান্তিক মানুষের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার মেরুদণ্ড। এগুলো শুধু সাধারণ জ্বরের ওষুধ বা ছোটখাটো আঘাতের চিকিৎসাস্থল নয়, বরং স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবার পরিকল্পনা এবং জরুরি প্রাথমিক সহায়তার কেন্দ্রবিন্দু।
ভাবুন তো, রাতবিরেতে অসুস্থ সন্তানের জন্য যখন একজন মায়ের মন ছটফট করে, তখন বাড়ির কাছেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে তার অনুভূতি কেমন হতে পারে? অথবা একজন প্রবীণ ব্যক্তি যিনি হয়তো নিয়মিত ঔষধ নিতে বা রক্তচাপ মাপাতে যেতে পারতেন, তিনি এখন ২৫ কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দেওয়ার কথা শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বন্ধ থাকা নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং এক গভীর হতাশার চিত্র।
হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের মানুষের এই দুর্দশা দ্রুত নিরসনে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তি যেখানে একটি মৌলিক অধিকার, সেখানে এটি যেন কেবল শহরের মানুষের সুবিধা না হয়। অবিলম্বে বন্ধ হয়ে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সচল করে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। এটি শুধু হাঁসাইগাড়ীর মানুষের নয়, বরং দেশের সামগ্রিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন হবে।