সন্তানের শিক্ষায় অভিভাবকদের অধিকার: ভার্জিনিয়ার ভোটের মাঠে এক নতুন সুর

শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, আমাদের সন্তানেরা কোন পরিবেশে শিখবে – এই প্রশ্নগুলো বরাবরই মানুষের মনে ঘুরপাক খেয়েছে। তবে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে এই বিষয়টি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সেখানকার ভোটারদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষায় অভিভাবকদের ভূমিকা এবং তাদের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল স্কুলের পাঠ্যক্রমের ব্যাপার নয়, বরং আরও গভীরে গিয়ে শিক্ষাদানের পদ্ধতি, মান এবং অভিভাবকদের পছন্দ ও নিয়ন্ত্রণাধিকার নিয়ে এক জোরালো আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ফ্লোরিডা বা অ্যারিজোনার মতো রাজ্যগুলিতে ‘অর্থ শিশুর পেছনে যাবে’ (money follows the child) অর্থাৎ স্কুল পছন্দ voucher ব্যবস্থার প্রচলন নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ধারণা অনুসারে, সরকারি শিক্ষা তহবিল সরাসরি স্কুলের বদলে শিক্ষার্থীর পেছনে বরাদ্দ করা হয়, যাতে অভিভাবকেরা তাদের পছন্দমতো যেকোনো স্কুল (সরকারি বা বেসরকারি) বেছে নিতে পারেন। ভার্জিনিয়াতেও এমন নীতির পক্ষে জোরালো সওয়াল চলেছে অনেক বছর ধরে। এর ফলস্বরূপ, ২০১২ সালে ভার্জিনিয়া সরকার ‘শিক্ষা উন্নয়ন’ (Education Improvement) নামে একটি উদ্যোগ নেয়, যা হয়তো অভিভাবকদের চাওয়া কিছুটা পূরণের পথ খুলেছিল, কিন্তু পুরোপুরিভাবে সবার আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারেনি।

কিন্তু কেন এই বিষয়টি ভার্জিনিয়ার ভোটারদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে? এর মূলে রয়েছে প্রতিটি অভিভাবকের তার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা। বাবা-মা চান তাদের সন্তান এমন একটি শিক্ষা গ্রহণ করুক যা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, মেধা এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। অনেক সময় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সবার জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে না। তাই অভিভাবকরা বিকল্প স্কুলের ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রম নির্বাচনে স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে তাদের সন্তানের শিক্ষাজীবনে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের দাবি করছেন।

এই ধরণের ‘স্কুল পছন্দ’ ব্যবস্থার কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী শিক্ষার প্রসারে সহায়তা। তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান, বিশেষ করে সরকারি স্কুলের অর্থায়ন এবং সার্বজনীন শিক্ষার মান বজায় রাখা নিয়ে উদ্বেগ থাকতে পারে। এটি কেবল অর্থায়নের মডেল নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর অধিকার ও পরিবারের পছন্দের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার এক বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ। এই বিতর্ক থেকে বোঝা যায়, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও বেশি সাড়াদানশীল এবং প্রয়োজন-ভিত্তিক করার তাগিদ কতটা তীব্র।

ভার্জিনিয়ার ভোটারদের এই উদ্বেগ স্পষ্টতই একটি বার্তা দিচ্ছে: শিক্ষানীতি প্রণয়নে অভিভাবকদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এটি কেবল একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং বিশ্বজুড়েই শিক্ষাব্যবস্থাগুলোতে যে পরিবর্তন আসছে, তার একটি প্রতিচ্ছবি। যখন অভিভাবকরা তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন, তখন শিক্ষা শুধু শ্রেণীকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থায় আরও মৌলিক সংস্কারের পথ খুলে দিতে পারে, যা প্রতিটি শিশুকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশে সহায়তা করবে।

মূল সূত্র: https://biztoc.com/x/d50c50fe67be70a3

সর্বশেষ লেখা