আজকাল স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসের ট্রেন্ডগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওজন কমানো, শক্তি বাড়ানো কিংবা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অনেকে এই নতুন ধারাগুলোর দিকে ঝুঁকছেন। তবে কীটো, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা প্ল্যান্ট-বেজড ইটিং-এর মতো নামগুলো শুনে অনেকেই কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হন। আসলে এই পদ্ধতিগুলো কী এবং কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা জরুরি।
কীটো ডায়েট, যা কিটোজেনিক ডায়েট নামেও পরিচিত, মূলত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ ভীষণভাবে কমিয়ে দিয়ে চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার উপর জোর দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরকে কিটোসিস নামক একটি মেটাবলিক অবস্থায় আনা, যেখানে শরীর গ্লুকোজের বদলে চর্বি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে। এর ফলে দ্রুত ওজন কমানো এবং শক্তির মাত্রা স্থির রাখার দাবি করা হয়। তবে এই ডায়েট বেশ কঠোর এবং দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কোনো নির্দিষ্ট খাবার বাদ দেওয়ার পরিবর্তে খাবার খাওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে। এখানে “কী খাবেন” তার চেয়ে “কখন খাবেন” তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো দিনে ১৬ ঘণ্টা উপোস থাকা এবং বাকি ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাবার গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে শরীরের মেটাবলিজম উন্নত হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কোষের মেরামত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় বলে ধারণা করা হয়। এটি অনেকের কাছেই অপেক্ষাকৃত সহজ মনে হলেও, প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতে পারে।
প্ল্যান্ট-বেজড ইটিং মূলত গাছপালা থেকে প্রাপ্ত খাবারের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। এতে ফল, সবজি, শস্য, ডাল, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। এই খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন রূপ রয়েছে – যেমন সম্পূর্ণ নিরামিষাশী (ভেগান) থেকে শুরু করে ফ্লেক্সিটোরিয়ান যারা মাঝে মাঝে মাংস খান। পরিবেশগত সুবিধা এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি খুবই উপকারী বলে বিবেচিত। তবে পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে একটু পরিকল্পনা করে চলতে হয়।
এই প্রতিটি ডায়েটেই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা থাকে, তবে সবার জন্য এক নিয়ম প্রযোজ্য নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের শরীরের চাহিদা এবং জীবনযাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি খাদ্যাভ্যাস বেছে নেওয়া। কোনো ট্রেন্ড অনুসরণ করার আগে একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, হঠাৎ করে কোনো ডায়েট শুরু না করে, ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলাই দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতার চাবিকাঠি।