সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, যেমন শ্রীলঙ্কার কলম্বো, বাংলাদেশের ঢাকা এবং নেপালের কাঠমান্ডুতে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ চোখে পড়ছে। এই ‘জেন জ়েড’ বা নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা প্রচলিত শাসনব্যবস্থা এবং দীর্ঘদিনের পুরোনো রীতির প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে। তাদের এই প্রতিবাদ শুধু কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং গভীরতর এক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ, যা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলে দিতে পারে।
এই অসন্তোষের মূলে রয়েছে নানাবিধ কারণ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানের অভাব, দুর্নীতির ব্যাপকতা এবং সুশাসনের অভাব তাদের হতাশ করছে। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া অগ্রগতি ও উন্নত জীবনযাত্রার মানের সাথে পরিচিত এই প্রজন্ম নিজেদের দেশে এর অভাব দেখে ক্ষুব্ধ। তারা একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চায়, যেখানে মেধা ও যোগ্যতা গুরুত্ব পাবে, স্বজনপ্রীতি বা অনিয়ম নয়।
জেন জ়েডের প্রতিবাদগুলি বেশ স্বতন্ত্র প্রকৃতির। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দ্রুত সংগঠিত হয় এবং তাদের বার্তা জনমানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর না করে, তারা নিজেদের মতো করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে। তাদের আন্দোলনে শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, পরিবেশ সুরক্ষা, নারী অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মতো বিচিত্র বিষয়ও উঠে আসে।
এই তরুণদের প্রতিবাদ ইতিমধ্যেই কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, যা নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে। তবে তাদের পথ মসৃণ নয়। পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামো এবং ক্ষমতাবান শ্রেণী এই নতুন ধারাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কখনো দমন-পীড়ন, আবার কখনো আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা দেখা যায়। তা সত্ত্বেও, জেন জ়েডের এই সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
মূলত, দক্ষিণ এশিয়ার এই তরুণ প্রতিবাদী ঢেউ কেবল একটি সাময়িক উত্তেজনা নয়, বরং এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। এই প্রজন্ম আর নীরব দর্শক থাকতে রাজি নয়; তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে গড়তে চায় এবং একটি উন্নত ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট বার্তা – এই নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের সাথে কাজ করার সময় এসেছে, অন্যথায় অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।