সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে দেশের মানুষকে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই রোগ, যা জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। একই সময়ে নতুন করে ১০৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা দেখায় যে ডেঙ্গুর বিস্তার এখনও কতটা তীব্র। এই পরিসংখ্যানগুলো শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে এক একটি পরিবার, এক একটি স্বপ্ন, এক একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২১২ জনে পৌঁছেছে, এবং এ পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৯০৭ জন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভয়াবহ চিত্র ডেঙ্গুর ব্যাপকতা তুলে ধরে। বিশেষত, গত এক দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৭ জনের মৃত্যু ইঙ্গিত দেয় যে নগরীর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল এখনও এই মশার প্রজনন ও রোগের বিস্তারের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সংখ্যাগুলো কেবল স্বাস্থ্য খাতের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক বড় সতর্কবার্তা। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, চিকিৎসা কর্মীদের উপর চাপ, এবং আক্রান্তদের পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা – সবকিছুই এই মৌসুমি রোগকে এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত করেছে। প্রতি বছর ডেঙ্গুর পুনরাবৃত্তি সত্ত্বেও এর নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করা এখনও বড় একটি প্রশ্ন। মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের যে গতানুগতিক কার্যক্রম চলে, তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা, ছাদ, ফুলের টব বা অন্য কোনো স্থানে পানি জমতে না দেওয়া, জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং মশা নিধনে সরকারের উদ্যোগকে সহযোগিতা করা – প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, ডেঙ্গু আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সময় মতো সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনোরকম ঢিলেমি করার সুযোগ নেই। এই ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থার সমন্বিত ও নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আশা করা যায়, সকলের সম্মিলিত প্রয়াস এই মরণব্যাধিকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবে এবং প্রতিটি জীবন মূল্যবান, এই বার্তাটি যেন আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূলমন্ত্র হয়।