ঢাকার আকাশ আজ ধূসর চাদরে ঢাকা। শ্বাস নিতেই মনে হয়, আমরা কি শুধু অক্সিজেন নিচ্ছি, নাকি এর সঙ্গে মিশে আছে অজস্র বিষাক্ত কণা? সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আমাদের চোখ খুলে দিচ্ছে; প্রিয় ঢাকার বাতাস এখন শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, রীতিমতো বিপজ্জনক। এই নীরব ঘাতক দিনে দিনে আমাদের স্বাস্থ্যকে ঠেলে দিচ্ছে এক গভীর সংকটের দিকে, যার প্রভাব পড়ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের ওপর।
এই ভয়াবহ দূষণের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্মাণ কাজের ধুলো, ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্প-কারখানার বর্জ্য এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো প্রতিনিয়ত বাতাসের মানকে খারাপ করছে। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও এই দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলছে। প্রতিটি উৎসই যেন একে অপরের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঢাকাকে পরিণত করছে একটি গ্যাস চেম্বারে।
এর ফলস্বরূপ, শহরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ, এমনকি হৃদরোগের মতো জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে; তাদের অপুষ্ট ফুসফুসে এই বিষাক্ত বাতাস দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করছে। এছাড়া, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের মতো অপ্রত্যক্ষ প্রভাবও এর সঙ্গে জড়িত। একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তোলার পথে এই দূষণ এক বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। সরকারের পক্ষ থেকে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরাও সচেতন হতে পারি; অপ্রয়োজনীয় গাড়ি ব্যবহার পরিহার করা, মাস্ক পরা এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলায় আমরা ভূমিকা রাখতে পারি। সচেতনতাই পারে একটি টেকসই সমাধান নিয়ে আসতে।
ঢাকার বাতাস শুধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান নয়, এটি আমাদের জীবন ও জীবিকার অংশ। এই বিষাক্ত পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া বিকল্প নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন ঢাকা নিশ্চিত করতে হলে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো আমাদের প্রিয় এই শহর একদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে, আর আমরা হারাতে বসবো এর প্রাণবন্ত ঐতিহ্য। সময় এসেছে, এক হয়ে নিঃশ্বাসের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে নামার।